‘নববর্ষ’ বরণে সৈকত নগরীতে বর্ণিল আয়োজন

সাইফুল ইসলাম,কক্সবাজার জার্নাল

বাঙ্গালী প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে শুরু হয়েছে নানান প্রস্ততি। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চারুকলা শিল্পীরা। তুলির আচঁড় রঙ্গের বাহারে তুলে ধরা হচ্ছে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

শনিবার ১৪২৫ বঙ্গাব্দ পার হলেই সূর্যোদয় ঘটবে নতুন একটি বছর ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। এদিকে বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ পালন করেত কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, খেলাঘর, তারকা মানের হোটেলগুলোতে বৈশাখী উৎসব উদযাপনে নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সকাল ৭ টার দিকে শহীদ দৌলত ময়দানে নববর্ষ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ বরণ। ৮টার দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে হলিডে মোড় দিয়ে ঘুরে পিটিআই পরীক্ষণ বিদ্যালয় দিয়ে শহীদ দৌলত ময়দানে এসে শেষ হয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান হবে। বিকেল ৪ টার দিকে সমুদ্র সৈকতের লাবণী বীচে ঘুড়ি উৎসব এবং ৫ টার দিকে বৈশাখী বীচ র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া পৌরসভা কর্তৃক সকাল ৮ টার দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা, ৯ টার দিকে টেনিস স্কুলে পান্তা ও ইলিশের আয়োজন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কর্তৃক মঙ্গল শোভাযাত্রা শহীদ দৌলত ময়দানে বৈশাখী অনুষ্টান। ওশান প্যারাডাইস ও কক্স-টুডেসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন তারকা মানের হোটেলে কর্তৃক উৎসব পালনে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

এছাড়াও বাঙ্গালী প্রাচীন ঐতিহ্য বৈশাখ উদযান উপলক্ষে কক্সবাজারে আয়োজন করা হচ্ছে মেলাসহ লোকজ নানান সাংস্কৃতিক উৎসবের। রঙ্গীলা পরশের মাঝে গ্রাম বাংলার নানা আলপনায় সাজানো হচ্ছে হোটেল-মোটেল জোনের তারকা হোটেলগুলো। অনেক হোটেল ঘোষণা করেছে অতিথিদের জন্য সাশ্রয়ী নানান প্যাকেজ। বৈশাখ বরণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঈদ উৎসবের মতো লোকসমাগমের আশায় বাড়তি নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে নববর্ষ মিলিয়ে তিনদিনের ছুটি পড়েছে। এ কারণে অন্যান্য বারের চেয়ে এবার জমবে বাংলা বর্ষবরণ। তাই বাংলা বর্ষবরণে কক্সবাজারে আসছেন ভ্রমন পিপাসুরা। এ লক্ষ্যে তারকা হোটেলসহ গেস্ট হাউস ও কটেজ এবং আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগাম বুকিং হয়ে গেছে।

অনেক ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবী পরিবার-পরিজন নিয়ে বৃহস্পতিবার কক্সবাজার এসে পৌঁছে গেছেন। চৈত্রের কাঠফাটা রোদের মাঝেও মেঘ-রুদ্দুর খেলায় সৈকতের ঢেউয়ের আচড় ছুঁয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন আগত পর্যটকররা।

আরেক তারকা হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টের ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ (এফ এন্ড বি) ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোর ন্যায় বাংলা নববর্ষ বরণ উপলক্ষে এবারও হোটেল প্রাঙ্গনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে। সাশ্রয়ী রেটে ছাড়া হচ্ছে বৈশাখী খাবারের বিশেষ আয়োজন।

বাঙালিয়ানার ষোলআনা’ পূর্ণ করতে হোটেলগুলোর আয়োজনে হাড়িভাঙ্গা বালিশ খেলা এবং বাচ্চাদের ঝুঁড়িতে বল ছুড়া এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবেশনায় নৃত্যসহ লোকজ সংস্কৃতির নানা আয়োজনসহ ঘোষণা করা হয়েছে বৈশাখ উপলক্ষ্যে সাশ্রয়ী প্যাকেজ।

এছাড়াও পৃথক আয়োজন করছে তারকা হোটেল কক্স-টু-ডে, সী-গাল, লংবীচ, বেস্ট ওয়েস্টার্ন, মারমেডসহ সবকটি বড় হোটেল-মোটেলে। তারকা হোটেলগুলো ইনডোরে নিজেদের মতো উৎসব আয়োজন করলেও অন্যান্য হোটেল গেস্ট হাউসগুলো প্রশাসন আয়োজিত র‌্যালি ও অনুষ্ঠানে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

টুয়াক সম্পাদক আসাফ-উদ-দৌলা বলেন, নববর্ষে সপ্তাহিক মিলিয়ে তিনদিনের ছুটি পড়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শহর ও সাগরপাড়ের প্রায় হোটেলের কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে রয়েছে। অল্প কক্ষ হাতে রেখে ওয়াকিং আসাদের সঙ্গে দরদামে একটু ভালো ব্যবসা করার চেষ্টা করবে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারি রেস্ট হাউসে লক্ষাধিক মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। বৈশাখী ছুটিতেও কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড় থাকবে বলে আশা করা যায়। সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, সাফারি পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথে পর্যটকদের পদচারণা পড়বে বলে আশা করছেন এ হোটেল মালিক।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। পর্যটন বিকাশে বৈশাখের বৈচিত্র্যময় আয়োজন এবারও থাকছে কক্সবাজারে। জেলা প্রশাসন বৈশাখ বরণে সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করবে। এরপর শহীদ দৌলত ময়দানে আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এ আয়োজনে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।